ছোটবেলায় মায়ের রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে চিচিঙ্গা ভাজির গন্ধ পেলেই মনে হতো, স্বর্গ খুলে গেছে! গরম ভাত, মশলাদার চিচিঙ্গা আর মুগের ডাল—এর জুড়ি নেই।
চিচিঙ্গা ভাজি শুধু একটা পদ নয়, এটা আমাদের ঘরোয়া ঐতিহ্য। বানানোও সোজা, স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো।
আমি মায়ের কাছ থেকে শেখা রেসিপিটা শেয়ার করছি, যাতে আপনিও বাড়িতে বানিয়ে উপভোগ করতে পারেন। বাঙালি খাবারের ফ্যান হন কিংবা নতুন কিছু চাইছেন—এটা আপনার জন্যই।

চিচিঙ্গা ভাজি নিয়ে শুরু করছি। ছোটবেলায় গ্রীষ্মকালে বাড়িতে প্রায়ই এটাই হতো। দিদিমা বলতেন, “পেট হালকা রাখে, গরম কমায়” আর তাই সত্যি।
চিচিঙ্গা লম্বা, সবুজ, টকটকে দেখতে। সরষের তেলে কালোজিরা ফোড়ন, একটু লঙ্কা দিলে ভাজা হয়ে উঠলে যে সুগন্ধ! গরম ভাতের সঙ্গে মিলিয়ে খেলে যেন মুখে বাঙালির স্বর্গ খুলে যায়।
আর জানলে অবাক হবেন — এত স্বাদ, আবার স্বাস্থ্যও ঝড়ঝড় করে বাড়ে! ১০০ গ্রামে মাত্র ১৫ ক্যালোরি, ফাইবার ভরপুর, ভিটামিন আছে তো আছেই। হজমও হয় দারুণ। তাহলে চলুন, সহজ, স্বাস্থ্যকর আর মজার এই চিচিঙ্গা ভাজি বানানোর রেসিপি শিখে নিন। রান্নাঘরে ঢুকে পড়ুন, ঘরের মানুষ মুগ্ধ হবেই!

চিচিঙ্গা ভাজি – বাঙালি স্বাদের সহজ রেসিপি
Ingredients
Equipment
Method
- প্যানে তেল গরম করে জিরা বা কালোজিরা ফোড়ন দিন।
- পেঁয়াজ, রসুন ও আদা দিয়ে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
- হলুদ, মরিচ গুঁড়ো ও লবণ দিয়ে মেশান।
- চিচিঙ্গা ও কাঁচা লঙ্কা দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ১০-১২ মিনিট নরম হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। মাঝে মাঝে নাড়ুন।
- পানি শুকিয়ে গেলে ঢাকনা খুলে আরও ২-৩ মিনিট ভাজুন।
- ধনে পাতা দিয়ে সাজিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
Video
প্রো টিপস এবং বৈচিত্র্য
আপনার চিচিঙ্গা ভাজি আরও দারুণ করতে এই টিপস ও বৈচিত্র্য ব্যবহার করুন:
প্রো টিপস
চিচিঙ্গা ভাজি বানাতে কয়েকটা টিপস দিচ্ছি, যেগুলো আমার মায়ের থেকে শেখা।
- তিতকুটে ভাব এড়ান: চিচিঙ্গা কাটার আগে একটু চেখে দেখুন। যদি তিতকুটে হয়, লবণ-পানিতে ১৫ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- গন্ধ কমান: কাটার সময় দুধ বা তেল মাখলে গন্ধ কমে যায়।
- টেক্সচার ভালো রাখুন: মাঝারি আঁচে ভাজুন, খাস্তা থাকে আর স্বাদ ভালো হয়।
- তেল বেছে নিন: সরষের তেল বাঙালি স্বাদ দেয়, নারকেল তেল দিলে হালকা স্বাদ হয়।
বৈচিত্র্য
- গোয়ান স্টাইল: ধনে, জিরা, লঙ্কা গুঁড়ো দিয়ে ভাজুন, নারকেল বেশি দিয়ে সাজান।
- অন্ধ্র স্টাইল: পানির জায়গায় দুধ দিলে ক্রিমি হয়ে উঠে।
- শ্রীলঙ্কান মাল্লুং: নারকেল, হলুদ, লেবু দিয়ে সালাদের মতো বানান।
- ঝাল বাঙালি টুইস্ট: ভাজা জিরা আর গরম মশলা দিলে স্বাদ আরও চমৎকার!
চিচিঙ্গা ভাজি পরিবেশনের পরামর্শ
চিচিঙ্গা ভাজি যেকোনো খাবারের সঙ্গে দারুণ মানায়:
- বাঙালি থালি: গরম ভাত, মুগের ডাল, আর একটু ঘি দিয়ে খান—এ যেন ঘরের শান্তি!
- রুটি বা পরোটা: শুকনো সবজি হিসেবে রুটি বা পরোটার সঙ্গে দারুণ।
- উৎসবের টেবিল: তেঁতুলের ঝোল বা শর্ষে মাছের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
- দ্রুত লাঞ্চ: দইয়ের সঙ্গে রুটিতে মুড়ে হালকা খাবার হিসেবে খান।
থালির আইডিয়া: আলু পোস্ত, শর্ষে মাছ, আর লুচি—একটা পুরো বাঙালি থালি বানান। এটা আমার ছোটবেলার স্মৃতি, কলকাতার গলিতে খাওয়া খাবারের স্বাদ!
চিচিঙ্গা ভাজি স্বাস্থ্য উপকারিতা
চিচিঙ্গা ভাজি শুধু স্বাদেই নয়, স্বাস্থ্যেও অসাধারণ:
- কম ক্যালোরি: ১০০ গ্রামে মাত্র ১৫ কিলোক্যালোরি—ওজন কমানোর জন্য আদর্শ।
- উচ্চ ফাইবার: হজম ভালো রাখে, পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা থাকে।
- ভিটামিনে ভরপুর: ভিটামিন এ (চোখ), সি (রোগ প্রতিরোধ), ও বি৬ (শক্তি) আছে।
- শরীর ঠান্ডা রাখে: ৯৪% পানি থাকায় গরমে হাইড্রেশন বজায় রাখে।
- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: ফ্ল্যাভোনয়েড শরীর সুস্থ রাখে (জার্নাল অফ ফুড সায়েন্স অনুযায়ী)।
আমার মা বলতেন, “চিচিঙ্গা খা, শরীর ঠান্ডা থাকবে!” এটা সত্যি—খেয়ে শরীর হালকা লাগে, মন জুড়িয়ে যায়!
সংরক্ষণ এবং প্রস্তুতির টিপস
সংরক্ষণ: তাজা চিচিঙ্গা ভেজা কাপড়ে মুড়ে ফ্রিজে ৭ দিন রাখুন। রান্না করা ভাজি এয়ারটাইট পাত্রে ২-৩ দিন বা ফ্রিজারে ১ মাস রাখতে পারেন।
প্রস্তুতির কৌশল: আগের দিন কেটে লবণ দিয়ে এয়ারটাইট ব্যাগে রাখুন—সময় বাঁচবে!
বর্জ্য কমান: শাঁস ফেলবেন না! তেঁতুল, লঙ্কা, আর নারকেল দিয়ে চটকানি বানান—এটা অসাধারণ হয়!
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
চিচিঙ্গার তিতকুটে স্বাদ কীভাবে দূর করব?
কাটা চিচিঙ্গায় লবণ ছিটিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে পানি চেপে ফেলুন। বা লবণ-পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।
তেল ছাড়া চিচিঙ্গা ভাজি বানানো যায়?
হ্যাঁ! মশলা শুকনো ভেজে পানি দিয়ে চিচিঙ্গা স্টিম করুন। নারকেল দিয়ে স্বাদ বাড়ান।
চিচিঙ্গা ভাজির সঙ্গে কী খাওয়া যায়?
ভাত-ডাল, রুটি, বা শর্ষে মাছের সঙ্গে দারুণ। বাঙালি থালির জন্য আদর্শ।
ভালো চিচিঙ্গা কীভাবে বাছব?
শক্ত, উজ্জ্বল সবুজ, ৬-৮ ইঞ্চি লম্বা চিচিঙ্গা বেছে নিন। নরম দাগ থাকলে এড়িয়ে চলুন।
উপসংহার
চিচিঙ্গা ভাজি শুধু একটা রেসিপি নয়, এ আমাদের বাঙালি ঘরের গল্প। মায়ের হাতের রান্নার সেই পরিচিত স্বাদ, যেটা মুখে দিলেই মন ভরে যায়। এই সহজ, স্বাস্থ্যকর পদটি বানিয়ে আপনার পরিবারকে অবাক করে দিন। আজ রাতেই চেষ্টা করুন, আর আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে শেয়ার করুন! বাঙালি খাবার ভালোবাসেন? আমাদের আলু পোস্ত বা মুগের ডাল রেসিপি দেখুন। এই রেসিপি পিন করুন বা হোয়াটসঅ্যাপে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন!
Related Post

My name is Yeasin Sorker. I have 10 years of experience in cooking and working in various aspects of the kitchen. I studied at Beacon Academy Bangladesh and am now working with them as well. I love discovering, experimenting, and sharing new cooking recipes. Through my website “Mr Kitchen Adviser“, I share my cooking experiences, recipes, and kitchen tips so that everyone can learn from them and make their cooking experience easier and more enjoyable.